বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিকর্মের ওপর স্বত্ত্বগ্রহীতার মৌলিক অধিকার বা স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কপিরাইট আইনের উৎপত্তি । মানুষ যেন সৃষ্টিধর্মী কাজে উদ্বুদ্ধ হয় এবং তার সৃষ্টিকর্ম থেকে সে লাভবান হতে পারে তা নিশ্চিত করাই এরূপ আইনের উদ্দেশ্য। এ আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো:
১. বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি সম্পর্কিত (Relatedness with intellectual property): কপিরাইট হলো সৃষ্টিকর্মের ওপর মালিকের আইনগত অধিকার । মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি থেকে সৃষ্ট এই কর্ম বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি হিসেবে পরিচিত । একজন লেখকের লেখা, কবির কবিতা, গায়কের গান ও নতর্কীর নৃত্যের সিডি, ফটোগ্রাফারের ছবি, পরিচালকের বানানো সিনেমা, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার-এর সবই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি । যা কপি বা নকল করে উৎপাদন সম্ভব । এগুলো কপিরাইটের সাথে সম্পর্কিত ।
২. স্বত্বাধিকারীর স্বার্থ সংরক্ষণ (Maintenance of interest of owners): লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক বা এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ তাদের মেধা, শ্রম ও অধ্যাবসায়ের মধ্য দিয়ে যে সৃজনশীল কর্মের জন্ম দেন উক্ত কর্মের ওপর ব্যক্তির স্বত্বগত স্বার্থ প্রতিষ্ঠা করাই কপিরাইট আইনের মূল্য উদ্দেশ্য। একজনের প্রচেষ্টার ফসল যেনো অন্যে যেয়ে যেতে না পারে, যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই সৃষ্টিকর্ম থেকে যেন তিনিই লাভবান হন- এই আইন তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। স্বত্বাধিকারী যেন লাভবান হয়ে আরও নতুন নতুন কর্ম সৃষ্টিতে উৎসাহিত হয় এ আইন তাও নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালায় ।
৩. নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রয়োগ (Application for particular time period): কপিরাইট আইনে স্বত্বাধিকারীর অধিকার একটা সময় পর্যন্ত সংরক্ষণের নির্দেশ থাকে; যেমন- প্রকাশিত সাহিত্য (বই, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি), নাটক, সঙ্গীত ও শিল্পকর্ম (ফট্রোগ্রাফ ব্যতিত) প্রণেতার মৃত্যুর পরবর্তী ষাট বছর পর্যন্ত কপিরাইট বিদ্যমান থাকে । ফটোগ্রাফ, চলচ্চিত্র ফিল্ম, শব্দ রেকর্ডিং ও ফটোগ্রাফের ক্ষেত্রে তা প্রকাশের বছর থেকে পরবর্তী ষাট বছর পর্যন্ত এই অধিকার প্রযোজ্য। সরকারি, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা কর্তৃক সৃষ্টকর্মের কপিরাইটের ক্ষেত্রেও এই মেয়াদ প্রকাশের বছরের পর ৬০ পত্রিকা বছর পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে । প্রকাশিত কর্মের সংস্করণের প্রকাশকের ক্ষেত্রে এই মেয়াদ প্রথম প্রকাশের পর সর্বোচ্চ ২৫ বছর।
৪. কপিরাইট নিবন্ধনের বিষয়টি ঐচ্ছিক (Copyright registration is not compulsory ) : আইনে কপিরাইট নিবন্ধনের বাধ্য-বাধ্যকতা আরোপ করা হয়নি। তবে কপিরাইট নিবন্ধন করা হলে তা আইনানুগ প্রকাশ্য দলিলের মর্যাদা লাভ করে । অন্যথায় তা সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করতে হয়; যা কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল । কে.সি. আগরওয়াল বনাম আনন্দ কুমার মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন মোকদ্দমার রায়ে এটা প্রমাণিত যে, কপিরাইট নিবন্ধন না করার কারণে এই আইনে বর্ণিত অধিকার থেকে কপিরাইটের স্বত্বাধিকারীকে বঞ্চিত করা যায় না।
৫. অধিকার ভঙ্গের জন্য শাস্তির নির্দেশ (Indicating the penalty for breach of right) : কপিরাইট ভঙ্গ করা হলে ভঙ্গকারীকে শাস্তি পেতে হয়। মি. ইমাম একটা বই লিখেছেন। এখন এই বইটা হুবুহু বা আংশিক নকল করে যদি কেউ ছাপে বা মি. ইমামের নামেই নকল বই বাজারে প্রকাশ করে তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হবে। এজন্য আইনে কারাদণ্ড ও জারিমানা বা উভয়বিধ শাস্তির বিধান রয়েছে।
৬. কপিরাইটের স্বত্বনিয়োগ গ্রহণযোগ্য (Assignment of copyright is acceptable ) : সৃজনশীল কর্মের প্রণেতা বা প্রথম স্বত্বাধিকারী তার অধিকার চুক্তিমূলে অন্যের নিকট হস্তান্তর করতে পারেন। একজন লেখক একটা বই লিখেছেন- তিনি এটা প্রকাশের জন্য প্রকাশকের সাথে কপিরাইট চুক্তি করে তাকে তা ছাপার ও পুনঃছাপার অধিকার প্রদান করতে পারেন। একজন বক্তা তার বক্তৃতার সিডি, একজন গায়ক তার গানের সিডি প্রকাশ, প্রচার ও বিক্রয়ের অধিকার অন্যকে দিতে পারেন। এরূপ স্বত্বনিয়োগীও কপিরাইট আইন অনুযায়ী নিবন্ধন করার অধিকার এবং সেক্ষেত্রে কপিরাইট অধিকার ভোগ করে থাকেন।
আরও দেখুন...